চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিংজিয়াংয়ের মুসলিম জনগোষ্টীর বিরুদ্ধে
চীনা সরকারের নিপীড়নের অভিযোগ বেশ পুরানো। সম্প্রতি চীনা সরকার মুসলমানদের
পোষাক পড়ার ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। হিজাব, বোরখা,টুপি বা চাদ তারা
প্রতীক আছে এমন পোষাক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এর আগে রমজানে রোজা রাখার ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছিলো। উইঘুর
মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের জাতিগত নিপীড়নমুলক কর্মকান্ড খুব একটা
গনমাধ্যমে আসে না। আবার জিনিজিয়াং এর মুসলমানদের একটি অংশ স্বাীধনতার জন্য
সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছে। এদের দমনের নামে সাধারন উইঘুর
মুসলমানদের ওপন চীন সরকার নানা ভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো
এক সময় সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে পৃষ্টপোষকতা দিলেও এখন অনেকটা নীরব ভ’মিকা পালন
করছে। সম্প্রতি সশস্ত্র সংগ্রামের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৮ জনের
মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। সামগ্রিকভাবে জিংজিয়াংয়ের মুসলমানরা অস্তিত্বের
সঙ্কটে রয়েছে।
জিংজিয়াং প্রদেশে জাতিগত অবস্থান
জিংজিয়াং প্রদেশের আয়তন ছয় লাখ ৪০ হাজার ৯৩০ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ উইঘুর (৮৪ লাখ), ৪১ শতাংশ হান (৭৫ লাখ), ৭ শতাংশ কাজাখ (১২ লাখ ৫০ হাজার), ৫ শতাংশ হুই বা হান মুসলিম (৮ লাখ ৪০ হাজার), কিরগিজ ০.৮৬ শতাংশ (১ লাখ ৫৯ হাজার), মোথলে, ডং জিয়াং ও দারুস ১.১৪ শতাংশ (এক লাখ ৯৫ হাজার) পামিরি ০.২১ শতাংশ (৪০ হাজার) জাইব ০.১৯ শতাংশ (৩৪,৫০০), মামুর ০.১১ শতাংশ (২০ হাজার)। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে এই প্রদেশে।
জিংজিয়াং প্রদেশের আয়তন ছয় লাখ ৪০ হাজার ৯৩০ বর্গমাইল এবং জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। এদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ উইঘুর (৮৪ লাখ), ৪১ শতাংশ হান (৭৫ লাখ), ৭ শতাংশ কাজাখ (১২ লাখ ৫০ হাজার), ৫ শতাংশ হুই বা হান মুসলিম (৮ লাখ ৪০ হাজার), কিরগিজ ০.৮৬ শতাংশ (১ লাখ ৫৯ হাজার), মোথলে, ডং জিয়াং ও দারুস ১.১৪ শতাংশ (এক লাখ ৯৫ হাজার) পামিরি ০.২১ শতাংশ (৪০ হাজার) জাইব ০.১৯ শতাংশ (৩৪,৫০০), মামুর ০.১১ শতাংশ (২০ হাজার)। এ ছাড়া অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মানুষ রয়েছে এই প্রদেশে।
তবে সামগ্রিকভাবে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু রাজধানী উরুমচিতে হানদের
সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে হানরা ৭৫.৩ শতাংশ এবং উইঘুর মাত্র ১২.৮ শতাংশ। এ
নগরীর শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমানদের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
সরকারি নীতির কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জিংজিয়াং প্রদেশের
পশ্চিমাঞ্চল (কাশগড়, খোতান, কিজিলশু ও আকসু এবং পূর্বাঞ্চলের তুরপানে
উইঘুরদের সংখ্যা বেশি। অন্য দিকে জিংজিয়াংয়ের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে হানদের
সংখ্যা বেশি।
চীন সরকার দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে হানদের এনে জিংজিয়াং প্রদেশে
পুনর্বাসিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অনেক আগে থেকেই। এর লক্ষ্য হচ্ছে
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই প্রদেশে হানদের প্রাধান্য সৃষ্টি করা। রাজধানী
উরুমচিতে মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশ হান তারই প্রমাণ বহন করে। প্রদেশের অন্য
নগরী ও জেলাগুলোতেও একই নীতি অনুসরণের মাধ্যমে হানদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
চীনে নৃতাত্ত্বিক বিভাজন
চীনের আয়তন ৯৭ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এই বিরাট ভূখণ্ডে যারা বাস করে তারা নৃজাতিক দিক থেকে সবাই এক নয়। চীনের অধিকাংশ অধিবাসীকে বলা হয় ‘হান’। কিন্তু তাই এই হান ছাড়াও চীনে বাস করে একাধিক জাতি। ভৌগোলিক দিক থেকে চীনকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা চলে। যে অঞ্চলে হান চীনাদের বাস, তাকে বলা হয় খাস চীন। নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যানুসারে হান চীনাদের সাধারণত ফেলা হয় দক্ষিণের মঙ্গোলীয় বিভাগে।
চীনের আয়তন ৯৭ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এই বিরাট ভূখণ্ডে যারা বাস করে তারা নৃজাতিক দিক থেকে সবাই এক নয়। চীনের অধিকাংশ অধিবাসীকে বলা হয় ‘হান’। কিন্তু তাই এই হান ছাড়াও চীনে বাস করে একাধিক জাতি। ভৌগোলিক দিক থেকে চীনকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা চলে। যে অঞ্চলে হান চীনাদের বাস, তাকে বলা হয় খাস চীন। নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যানুসারে হান চীনাদের সাধারণত ফেলা হয় দক্ষিণের মঙ্গোলীয় বিভাগে।
চীনা বলতে প্রধানত আমাদের মনে আসে এই হান চীনাদের কথা। চীনের ইতিহাস ও
সভ্যতা বলতে সাধারণভাবে আমরা যা বুঝি, তা হলো এই হান চীনাদেরই সৃষ্টি। সব
হান চীনার ভাষা এক নয়। উত্তরের হান চীনা আর দক্ষিণের হান চীনাদের ভাষা এক
ছিল না। কিন্তু লিপি ছিল এক। চীনা লিপি প্রতীকী চিত্রলিপি। এই প্রতীকগুলো
চীনে সর্বত্রই ছিল এক। কিন্তু মুখের ভাষা এক ছিল না। অনেক পরে সাধারণ একটা
ভাষা গড়ে ওঠে। যাকে বলে ম্যান্ডারিন। ম্যান্ডারিন শব্দটা অবশ্য চীনা ভাষার
নয়, পর্তুগিজ ভাষা। পর্তুগিজরাই প্রথম সাধারণভাবে আলোচনা করে এ ভাষাটি
নিয়ে। আর তাই বাইরের দুনিয়াই এই বিশেষ চীনা ভাষা পরিচিতি পেয়েছে
ম্যান্ডারিন নামে।
ম্যান্ডারিন ভাষার উদ্ভবের ইতিহাস বেশ অদ্ভুত। এ ভাষা কোনো রাষ্ট্রিক
প্রচেষ্টার ফল নয়। সারা চীনে এক সময় গড়ে উঠেছিল বিরাট ডাকাতের দল। আর এ
ডাকাতের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করতে গিয়েই উদ্ভব হয়েছিল ম্যান্ডারিন
ভাষার। হান চীনারা এখন ম্যান্ডারিন ভাষার কথা বললেও সব চীনা ম্যান্ডারিন
ভাষায় কথা বলে না। তাদের আছে নিজ নিজ ভাষা। চীনে আছে নৃ-জাতিক বিরোধ, আছে
ভাষার বিরোধ, আছে ধর্মীয় বিরোধও।
চীনের যে অঞ্চল মাঞ্চুরিয়া নামে পরিচিত, সেখানে বাস করত মাঞ্চুরা। মাঞ্চু জাতি হলো উত্তরের মঙ্গোলীয় মানবধারাভুক্ত। নৃজাতিক দিক থেকে এরা হলো হান চীনাদের থেকে ভিন্ন। মাঞ্চুদের এক রাজা খাস চীন দখল করেন সপ্তদশ শতাব্দীতে এবং মাঞ্চু রাজবংশ মহাচীন শাসন করে ১৯১২ সাল পর্যন্ত। মাঞ্চুরা আর হান চীনারা এখন প্রায় এক হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। মাঞ্চু রাজারা এক পর্যায়ে চীনের সভ্যতাকেই নিজেদের করে নিয়েছেন। কিন্তু মাঞ্চু ও হানদের মধ্যে যে রকম সদ্ভাব গড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে, মহাচীনে বসবাসকারী অন্যান্য নৃজাতি ও ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে হান চীনাদের একই রকম সদ্ভাব গড়ে উঠতে পারেনি। যেমন তিব্বতিদের সাথে হান চীনাদের থেকে গেছে বড় রকমের পার্থক্য। আর এই পার্থক্যের কারণে তিব্বতিরা এখন দাবি করছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। যাকে বলে মঙ্গোলিয়া তা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটা অংশকে আমরা বলি আউটার বা বহির্মঙ্গোলিয়া। এ অংশটা ১৯২৪ সাল থেকে পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এটা আর এখন মহাচীনের অংশ নয়।
চীনের যে অঞ্চল মাঞ্চুরিয়া নামে পরিচিত, সেখানে বাস করত মাঞ্চুরা। মাঞ্চু জাতি হলো উত্তরের মঙ্গোলীয় মানবধারাভুক্ত। নৃজাতিক দিক থেকে এরা হলো হান চীনাদের থেকে ভিন্ন। মাঞ্চুদের এক রাজা খাস চীন দখল করেন সপ্তদশ শতাব্দীতে এবং মাঞ্চু রাজবংশ মহাচীন শাসন করে ১৯১২ সাল পর্যন্ত। মাঞ্চুরা আর হান চীনারা এখন প্রায় এক হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। মাঞ্চু রাজারা এক পর্যায়ে চীনের সভ্যতাকেই নিজেদের করে নিয়েছেন। কিন্তু মাঞ্চু ও হানদের মধ্যে যে রকম সদ্ভাব গড়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে, মহাচীনে বসবাসকারী অন্যান্য নৃজাতি ও ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে হান চীনাদের একই রকম সদ্ভাব গড়ে উঠতে পারেনি। যেমন তিব্বতিদের সাথে হান চীনাদের থেকে গেছে বড় রকমের পার্থক্য। আর এই পার্থক্যের কারণে তিব্বতিরা এখন দাবি করছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা। যাকে বলে মঙ্গোলিয়া তা এখন দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটা অংশকে আমরা বলি আউটার বা বহির্মঙ্গোলিয়া। এ অংশটা ১৯২৪ সাল থেকে পৃথক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এটা আর এখন মহাচীনের অংশ নয়।
সাবেক মঙ্গোলিয়ার যে অংশটুকু তখন ভেতর বা ইনার মঙ্গোলিয়া নামে পরিচিত, কেবল
সেটাই হলো বর্তমান চীনের অংশ। মঙ্গোলিয়া থেকে চেঙ্গিস খান ত্রয়োদশ
শতাব্দীতে আক্রমণ করে দখল করেন খাস চীন, কোরিয়া, মধ্য এবং পশ্চিম এশিয়ার
বিস্তীর্ণ অঞ্চল। মঙ্গোলরাও হলো নৃতত্ত্বে যাকে বলে উত্তরের মঙ্গোল ধারার
মানুষ। খাস চীনাদের মতো দণি মঙ্গোল ধারার মানুষ তারা নয়। এদের দৈহিক
বৈশিষ্ট্য দিয়ে চিনতে পারা যায়। তিব্বত একটা বিরাট মালভূমি। তিব্বতিদের
চেহারা হানদের অনেক কাছাকাছি। কিন্তু তাদের আছে আপন ভাষার ইতিহাস ও
ধর্মচেতনা। চীনের যে অংশটাকে এখন বলা হয় জিংজিয়াং (সিংকিয়াং) তা এক সময়
পরিচিত ছিল চীনা তুর্কিস্তান হিসেবে। এখানে যারা বাস করে তারা কোনো চীনা
পরিবারভুক্ত ভাষায় কথা বলে না। ম্যান্ডারিন ভাষা শেখা এদের পে হয়ে আছে
কষ্টসাধ্য। এরা যে ভাষায় কথা বলে ও লিখে মনোভাব প্রকাশ করে, তা পড়ে তুর্কি
ভাষা পরিবারে।
মানবধারার দিক থেকে এদের বলা চলে তুরানি। ধর্মে এরা মুসলমান। মাঞ্চু রাজারা
মঙ্গোলীয়, তিব্বত ও জিংজিয়াং জয় করেন। তারা জিংজিয়াং দখল করেন সব শেষে,
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে। আমরা যাকে এখন বলি মহাচীন, তা হলো মাঞ্চু
রাজত্বের ফল। মাঞ্চু রাজারাই গড়েছেন বর্তমান মহাচীনের সীমানা। আগে চীন বলতে
এ রকম একটা বিশাল অঞ্চলকে বোঝায়নি। তিব্বতিরা খাস চীনাদের সাথে মিশে যেতে
চাচ্ছে না। মিশে যেতে চাচ্ছে না জিংজিয়াংয়ে বসবাসকারী তুর্কি ভাষাভাষী
মুসলমানরাও। তাই চীনে সৃষ্টি হতে পারছে জাতিসত্তার সমস্যা। চীনে আর একটি
জাতি আছে, তাদের বলে মিয়াও-ৎ-সু। মিয়াও-ৎ-সুরা সংখ্যায় হয়ে পড়েছে খুবই কম।
এরা এখন বাস করে চীনের দণি-পশ্চিমের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে। এরাও নিজেদের
ঠিক চীনা বলে মনে করে না। ভৌগোলিক দিক থেকে চীনকে মোটামুটি পাঁচ ভাগে ভাগ
করা চলে। আর অনেকের মতে, জাতিসত্তার দিক থেকে বিভক্ত করা চলে ছয় ভাগে। এই
ছয় ভাগের মধ্যে হান চীনারা হলো প্রধান। চীনা বলতে প্রথমত মনে আসে হানদেরই
কথা। আর চীনের প্রাচীন সভ্যতার স্রষ্টা হলো তারাই। হানদের ওপর তিনটি
ধর্মমতের প্রভাব আছে। এর মধ্যে দু’টির উদ্ভব হয়েছে চীনের মাটিতে। এর একটি
হলো তাও বা ডাও। আরেকটি হলো যাকে আমরা সাধারণত বলি কনফুসিও। চীনের তৃতীয়
ধর্মবিশ্বাস হলো বৌদ্ধ, যা সেখানে গেছে পূর্ব ভারত থেকে। চীনে এই তিন
ধর্মবিশ্বাস পাশাপাশি থেকেছে। সৃষ্টি হয়নি কোনো সঙ্ঘাতের। কিন্তু চীনে
ইউরোপীয় মিশনারিরা খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে হয়েছেন বাধার সম্মুখীন।
এক পর্যায়ে চীনে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার রাষ্ট্র কর্তৃক নিষিদ্ধ করা হয়। চীনে
বাধে খ্রিষ্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সঙ্ঘাত। মারা যায় অনেক
খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণকারী চীনা।
চীনে দু’রকম মুসলমান আছে। ‘হুই’ ও ‘উইঘুর’। হুই ও উইঘুর মুসলমানদের উদ্ভব
বিভক্ত এক নয়। যাদের বলা হয় হুই মুসলমান, তাদের পূর্বপুরুষদের পারস্য,
সিরিয়া, ইরাক, আনাতোলিয়া প্রভৃতি জায়গা থেকে ধরে এনেছিলেন চীনে, কাজ করার
জন্য। চীনে এরা বিয়ে করে হান কন্যা। এর ফলে উদ্ভব হয় হুইদের। এরা দেখতে
প্রায় হানদেরই মতো। কিন্তু হানদের সাথে এক হয়ে যাননি। বজায় থেকেছে সামাজিক
স্বাতন্ত্র্য। মূলত ইসলাম ধর্মের প্রভাবে। হুইরা খুবই নিষ্ঠাবান মুসলমান।
তারা আরবিতে কুরআন পাঠ করেন। ছেলেমেয়েদের নাম রাখেন প্রধানত আরবিতে। হুইরা
বাইরে হানদের মতো ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বললেও বাড়িতে যে ভাষায় কথা বলেন,
তাতে থাকতে দেখা যায় অনেক আরবি শব্দ। হুই ছেলেমেয়েরা প্রথমে পড়াশোনা শুরু
করে মসজিদের স্কুলে। সেখানে তারা কুরআন শরিফ পড়তে শেখে আরবি ভাষায়। হুই
ছেলেরা আয় করতে আরম্ভ করলে তার একটা অংশ রেখে দেয় তাদের সমাজে অভাবী
মানুষকে প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য। হুইরা সারা চীনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
তবে তারা বিশেষভাবে বাস করে উত্তর চীনের কান্সু প্রদেশে। কান্সুকেই তারা
প্রধানত নিজেদের দেশ বলে মনে করেন।
উইঘুরদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
উইঘুর হচ্ছে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলমানদের একটি গ্রুপ। পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বসবাস। উইঘুর মুসলমানদের মোট সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে চীনের জিংজিয়াং প্রদেশেই বাস করে ৮৫ লাখের মতো। হুনানসহ অন্যান্য চীনা প্রদেশ ও রাজধানী বেইজিংসহ বিভিন্ন নগরীতেও অল্পসংখ্যক উইঘুর বাস করে। এ ছাড়া কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়াতে উইঘুরদের বসবাস রয়েছে। এরা সুন্নি মুসলমান এবং অনেকেই সুফিবাদ চর্চা করেন।
উইঘুর হচ্ছে তুর্কি বংশোদ্ভূত মুসলমানদের একটি গ্রুপ। পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এদের বসবাস। উইঘুর মুসলমানদের মোট সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে চীনের জিংজিয়াং প্রদেশেই বাস করে ৮৫ লাখের মতো। হুনানসহ অন্যান্য চীনা প্রদেশ ও রাজধানী বেইজিংসহ বিভিন্ন নগরীতেও অল্পসংখ্যক উইঘুর বাস করে। এ ছাড়া কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুরস্ক, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান ও মঙ্গোলিয়াতে উইঘুরদের বসবাস রয়েছে। এরা সুন্নি মুসলমান এবং অনেকেই সুফিবাদ চর্চা করেন।
উইঘুর শব্দের অর্থ হচ্ছে নয়টি গোত্রের সমষ্টি বা সমন্বয়। তুর্কি ভাষায় এ
জন্য উইঘুর শব্দকে বলা হয় টকুজ-ওগুজ। টকুজ অর্থ নয় এবং গুর অর্থ উপজাতি।
ওগুজ থেকে গুর শব্দটি এসেছে। প্রাচীন আমলে আলতাই পর্বতমালার পাদদেশে
তুর্কিভাষী বিভিন্ন গোত্র বা উপজাতি বাস করত। এদের মধ্যে নয়টি উপজাতিকে
নিয়ে উইঘুর সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়। উইঘুরদের কখনো কখনো ‘গাউচি’ এবং পরে
‘তিয়েলে’ জনগোষ্ঠী হিসেবেও ডাকা হতো। তুর্কি শব্দ তিয়েলে বা তেলে এর অর্থ
হচ্ছে নয়টি পরিবার। বৈকাল হ্রদের আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী সিয়র তারদুস,
বাসমিল, ওগুজ, খাজার, আলানস, কিরগিজসহ মোট নয়টি গোষ্ঠীর সমন্বয়ে উইঘুর
নামের জনগোষ্ঠী বা জাতি গড়ে ওঠে।
উত্তরাঞ্চলীয় ওয়েই রাজবংশের শাসনামলে (৩৮৬-৫৩৪ এডি) উইঘুর জাতির অস্তিত্বের
দলিলপত্র পাওয়া গেছে। উইঘুর ইতিহাসকে চারটি ভাগে বিভক্ত করা যায় :
সাম্রাজ্য পূর্ব (৩০০ বিসি-৬৩০ এডি) সাম্রাজ্যকালীন (৬৩০-৮৪০ এডি), ইদিকুত
(৮৪০-১২০৯ এডি) ও মোঙ্গল (১২০৯-১৬০০ এডি)। এক সময় তারিম অববাহিকা থেকে
মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত উইঘুর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। যুদ্ধবিগ্রহ, বন্যা, খরাসহ
নানা কারণে এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে মঙ্গোলিয়ার উইঘুররা তারিম অববাহিকা
এলাকায় চলে গিয়ে সেখানে ছোট ছোট কয়েকটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এ সময়ই
বর্তমান জিংজিয়াং এলাকাটি কখনো বা উইঘুরিস্তান আবার কখনোবা পূর্ব
তুর্কিস্তান নামে উইঘুর মুসলমানদের শাসনে ছিল। কিন্তু ১৬৬৪ সালে বর্তমান
চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঞ্চু শাসকরা প্রতিষ্ঠা করেন কিং সাম্রাজ্য। তারা
মঙ্গোলিয়ার অধিকাংশ এলাকা, পূর্ব তুর্কিস্তান ও তিব্বত দখল করে এবং ২০০
বছর পর্যন্ত এই এলাকা তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই সময়কালে কিং সম্রাটদের
বিরুদ্ধে উইঘুররা অন্তত ৪২ বার বিদ্রোহ করেছে। শেষ পর্যন্ত ১৮৬৪ সালে
উইঘুররা পূর্ব তুর্কিস্তান থেকে কিং শাসকদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন এবং
কাশগড়কেন্দ্রিক এক স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এটাকে ইয়েতিসার বা সাত
নগরীর দেশও বলা হতো। কারণ কাশগড়, ইয়ারখন্ড, হোতান, আকসু, কুচা, কোরলা ও
তুরফান নামে সাতটি নগরী এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। অটোমান সাম্রাজ্য
(১৮৭৩), জার শাসিত রাশিয়া (১৮৭২) ও গ্রেট ব্রিটেন (১৮৭৪) উইঘুরদের নতুন এই
রাজ্য পূর্ব তুর্কিস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এমনকি এর রাজধানী কাশগড়ে এই
তিনটি দেশ তাদের কূটনৈতিক মিশনও খুলেছিল। কিন্তু রাশিয়ার জার পূর্ব
তুর্কিস্তান দখল করে নিতে পারে এমন আশঙ্কায় মাঞ্চু শাসকরা ১৮৭৬ সালে হামলা
করেন পূর্ব তুর্কিস্তানে।
জেনারেল ঝু জংতাংয়ের নেতৃত্বে ওই বাহিনীর হামলার প্রতি সমর্থন জানায়
ব্রিটেন। দখলের পর ১৮৮৪ সালের ১৮ নভেম্বর পূর্ব তুর্কিস্তানের নাম পাল্টে
রাখা হয় জিংজিয়াং বা সিনকিয়াং যার অর্থ ‘নতুন ভূখণ্ড’। কিন্তু মুসলিম বিশ্ব
এখনো এই এলাকাকে মোগলিস্তান বা তুর্কিস্তানের পূর্ব অংশ হিসেবেই জানে।
জিংজিয়াং নামকরণের আগে এই ভূখণ্ড মাঞ্চু চীনাদের কাছে হুইজিয়াং বা
মুসলমানদের ভূখণ্ড হিসেবে পরিচিত ছিল।
পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হওয়ার পর উইঘুর স্বাধীনতাকামীরা তাদের মুক্তির
লড়াই অব্যাহত রাখে। ১৯৩৩ ও ১৯৪৪ সালে তারা দুইবার বিদ্রোহ করেছে এবং শেষবার
তারা সফলও হয়। তারা আবার পূর্ব তুর্কিস্তান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
চীনের জাতীয়তাবাদী সরকার স্বাধীন তুর্কিস্তানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং জোসেফ
স্টালিনের সোভিয়েত ইউনিয়নও নতুন এই রাষ্ট্রকে সমর্থন জানায়। কিন্তু চীনের
গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদীরা হেরে যাওয়ার পর মাওসেতুংয়ের নেতৃত্বে বিজয়ী
কমিউনিস্টরা তুর্কিস্তানকে চীনের সাথে কনফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেন।
কিন্তু এতে উইঘুর নেতারা রাজি হননি। এর পর এক রহস্যঘেরা বিমান দুর্ঘটনায়
পূর্ব তুর্কিস্তানের সব শীর্ষ উইঘুর নেতা প্রাণ হারান। প্রচলিত আছে যে,
মাওসেতুংয়ের চক্রান্তেই ওই বিমান দুর্ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। ওই বিমান
দুর্ঘটনার পরপরই জেনারেল ওয়াং ঝেনের নেতৃত্বে বিশাল এক চীনা বাহিনী মরুভূমি
পাড়ি দিয়ে পূর্ব তুর্কিস্তানে হামলা চালিয়ে সেটি দখল করে। এরপর ওই
ভূখণ্ডের নাম পরিবর্তন করে আবার জিংজিয়াং রাখা হয়। চীনা দখলের পর অনেক
স্বাধীনতাকামী উইঘুর নেতা পালিয়ে তুরস্কে ও বিভিন্ন পশ্চিমা দেশে চলে যান।
তখন থেকেই জিংজিয়াংয়ের উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীনা কমিউনিস্ট সরকার নানাভাবে
নিপীড়ন চালিয়ে আসছে। অন্য দিকে স্বাধীনতাকামী উইঘুররা ১৯৪৯ সাল থেকেই
বিচ্ছিন্নভাবে হলেও কিছু তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
উইঘুররা নানাভাবে বঞ্চনার শিকার
জিংজিয়াং প্রদেশটি আয়তনের দিক থেকে চীনের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ হলেও এর জনসংখ্যা চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। প্রদেশের তুর্কি বংশোদ্ভূত উইঘুর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে তারা হানদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। চীনের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ জাতিগত হান হওয়ার কারণে জিংজিয়াং প্রদেশে তারা সংখ্যালঘু হয়েও উইঘুরদের বেশি সুবিধা ভোগ করছে। আগে সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘুদের নিয়োগের বিধান থাকায় উইঘুররা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোটা অনুযায়ী কিছু সুবিধা পেত। কিন্তু বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর উইঘুররা এখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এখন তাদের নিজ প্রদেশ জিংজিয়াংয়েও চাকরির ব্যবস্থা করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। যেকোনো একটি চাকরির জন্য তাদের জিংজিয়াং থেকে শত শত মাইল এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো প্রদেশে চলে যেতে হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপকূলীয় এলাকায় প্রেরণের নীতির কারণে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর চাকরিপ্রত্যাশীদের নাম নিবন্ধন করার পর অনেক দূরের উপকূলীয় প্রদেশগুলোতে জোর করে তাদের পাঠিয়ে দেয় কাজ করার জন্য। সেখানে বিভিন্ন কারখানায় তারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে হানদের নানা অত্যাচার ও বিদ্রপের মধ্যে।
জিংজিয়াং প্রদেশটি আয়তনের দিক থেকে চীনের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ হলেও এর জনসংখ্যা চীনের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ। প্রদেশের তুর্কি বংশোদ্ভূত উইঘুর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, চাকরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে তারা হানদের চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। চীনের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ জাতিগত হান হওয়ার কারণে জিংজিয়াং প্রদেশে তারা সংখ্যালঘু হয়েও উইঘুরদের বেশি সুবিধা ভোগ করছে। আগে সরকারি চাকরিতে সংখ্যালঘুদের নিয়োগের বিধান থাকায় উইঘুররা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোটা অনুযায়ী কিছু সুবিধা পেত। কিন্তু বেসরকারীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর উইঘুররা এখন সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এখন তাদের নিজ প্রদেশ জিংজিয়াংয়েও চাকরির ব্যবস্থা করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। যেকোনো একটি চাকরির জন্য তাদের জিংজিয়াং থেকে শত শত মাইল এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো প্রদেশে চলে যেতে হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপকূলীয় এলাকায় প্রেরণের নীতির কারণে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর চাকরিপ্রত্যাশীদের নাম নিবন্ধন করার পর অনেক দূরের উপকূলীয় প্রদেশগুলোতে জোর করে তাদের পাঠিয়ে দেয় কাজ করার জন্য। সেখানে বিভিন্ন কারখানায় তারা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে হানদের নানা অত্যাচার ও বিদ্রপের মধ্যে।
১৯৫০-এর দশকে সরকারের উদ্যোগে সাবেক সৈনিকদের দিয়ে গঠন করা আধা সামরিক
বাহিনী বিংতুয়ান জিংজিয়াংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে। কিন্তু
এই বাহিনীর বিভিন্ন পদ-পদবিতে উইঘুর ও অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব
মাত্র ১২ শতাংশ। বাকি ৮৮ শতাংশই হানদের দখলে। ফলে হানদের অর্থনৈতিক অবস্থার
যতটা উন্নতি হচ্ছে তার ঠিক বিপরীত অবস্থা হচ্ছে উইঘুরদের। তারা দরিদ্রই
থেকে যাচ্ছে। চীনের দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি ও অগ্রগতির ধারা থেকে সম্পূর্ণ
বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে উইঘুররা। জিংজিয়াংয়ের উত্তরাঞ্চলের হানরা ক্রমেই
সম্পদশালী হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উইঘুররা আগের মতোই
দারিদ্র্যজর্জরিত।
উইঘুররা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে নিজেদের ভাবতে পারছে না। দিন দিনই তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে ক্ষোভ। উরুমচিতে গত মাসের (৫ জুলাই) বিক্ষোভ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার কিছুটা ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত ৫ জুলাইয়ের দাঙ্গার পর দ্য চায়না বিজনেস জার্নাল তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলেছে, হান ও উইঘুরদের মধ্যে আয়ের বিরাট বৈষম্য উরুমচিতে ৫ জুলাইয়ের উইঘুরদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার অন্যতম প্রধান কারণ। উইঘুররা এখন নিজ ভূখণ্ডে পরবাসী বা বহিরাগত মানুষের মতো নিজেদের দেখছে। পত্রিকাটি উইঘুরদের মধ্যে সৃষ্ট এই হতাশা দূর করার পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
উইঘুররা চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে নিজেদের ভাবতে পারছে না। দিন দিনই তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। একই সাথে বাড়ছে ক্ষোভ। উরুমচিতে গত মাসের (৫ জুলাই) বিক্ষোভ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামার কিছুটা ক্ষোভেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। গত ৫ জুলাইয়ের দাঙ্গার পর দ্য চায়না বিজনেস জার্নাল তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলেছে, হান ও উইঘুরদের মধ্যে আয়ের বিরাট বৈষম্য উরুমচিতে ৫ জুলাইয়ের উইঘুরদের বিক্ষোভ ও দাঙ্গার অন্যতম প্রধান কারণ। উইঘুররা এখন নিজ ভূখণ্ডে পরবাসী বা বহিরাগত মানুষের মতো নিজেদের দেখছে। পত্রিকাটি উইঘুরদের মধ্যে সৃষ্ট এই হতাশা দূর করার পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
[একনজরে জিনজিয়াং প্রদেশ
নাম: জিংজিয়াং উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল
আয়তন: ৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৩০ বর্গমাইল
জনসংখ্যা: এক কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার
রাজধানী: উরুমচি
বৃহত্তম নগরী: উরুমচি
সরকারি ভাষা: ম্যান্ডারিন ও উইঘুর
সীমান্ত : জিনজিয়াং প্রদেশের সাথে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে।]
আয়তন: ৬ লাখ ৪০ হাজার ৯৩০ বর্গমাইল
জনসংখ্যা: এক কোটি ৯৬ লাখ ৩০ হাজার
রাজধানী: উরুমচি
বৃহত্তম নগরী: উরুমচি
সরকারি ভাষা: ম্যান্ডারিন ও উইঘুর
সীমান্ত : জিনজিয়াং প্রদেশের সাথে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান, তাজিকিস্তানের সীমান্ত রয়েছে।]
ধর্মীয় নিপীড়ন
প্রায় ৬০ বছর আগে কমিউনিস্ট চীনের সৈন্যরা জিংজিয়াংয়ে আসার পর থেকে এই ভূখণ্ডের মুসলমানরা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অধিকার হারিয়েছে। নানা আইন-কানুন ও বিধিবিধান করে সরকার উইঘুরদের ধর্মীয় জীবন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে চীন সরকার মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বাড়িতেও উইঘুরদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করে থাকে। মসজিদের বাইরে সব সময়ই নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়। সরকারিভাবে মসজিদে ইমাম নিয়োগ দেয়া হয় এবং ইমামদের প্রতি নজর রাখা হয়। উইঘুরদের সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ যেকোনো ধরনের প্রকাশনা সরকারি সেন্সর ছাড়া আলোর মুখ দেখতে পারে না। কারো ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ হলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জিংজিয়াংকে উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বলা হলেও বাস্তবে স্বায়ত্তশাসনের কোনো চিহ্নই এখানে নেই। পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামি আন্দোলন নামে জিংজিয়াংয়ের উইঘুরদের একটি সংগঠনকে চীন সরকার সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি চীন সরকার এই সংগঠনটিকে আলকায়েদার সাথে যুক্ত থাকার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাতেও এটির নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীনের গৃহযুদ্ধের সময় স্বল্প সময়ের জন্য জিংজিয়াংকে স্বাধীন-পূর্ব তুর্কিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল উইঘুররা। এরপরই চীনা বাহিনী এসে এই প্রদেশটিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ধীরে ধীরে সেই নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর ও ভয়াবহ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উইঘুর যুবকরা সম্প্রতি উরুমচিতে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, চীন সরকার তাদের ইতিহাস ও কাশগড় নগরীর প্রাচীন ভবনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিচিতি ও স্বার্থের প্রতি সরকারের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। উইঘুর শিশুরা স্কুলে তাদের নিজস্ব ভাষা ও ধর্ম শিক্ষা করতে পারে না। স্কুলে কেবল চীনা ভাষাতেই শিক্ষা দেয়া হয়। হানরা আমাদের আবর্জনার মতো গণ্য করে। সরকার উইঘুরদের প্রান্তিক অবস্থায় ঠেলে দেয়ার জন্য বিগত বছরগুলোতে উরুমচিসহ জিংজিয়াংয়ের অন্যান্য স্থানে লাখ লাখ হানকে এনে বসতি গড়ে দিয়েছে। রাজধানী উরুমচির প্রায় ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি হচ্ছে হান। এটি এখন হানদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
জিংজিয়াংয়ে চীন সরকারের অনুসৃত কঠোর নীতির কারণে খুব সামান্যসংখ্যক উইঘুর মুসলমানই হজে যাওয়ার সুযোগ পান। রমজান মাসে উইঘুর সরকারি কর্মচারীরা রোজা রাখতে পারেন না কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে। জুমার নামাজের খুৎবায় কী কথা বলা হবে সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগেই ইমামকে বলে দেন। উইঘুরদের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কাশগড় নগরীর অনেক মসজিদ ও ভবন ভেঙে ফেলে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর অনেক এলাকার মুসলমানদের উচ্ছেদ করে কাশগড় থেকে শত মাইল দূরে নির্মিত আবাসিক কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অনুমতি নেয়া কিংবা জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।
প্রায় ৬০ বছর আগে কমিউনিস্ট চীনের সৈন্যরা জিংজিয়াংয়ে আসার পর থেকে এই ভূখণ্ডের মুসলমানরা স্বাধীনভাবে তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অধিকার হারিয়েছে। নানা আইন-কানুন ও বিধিবিধান করে সরকার উইঘুরদের ধর্মীয় জীবন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে চীন সরকার মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমনকি বাড়িতেও উইঘুরদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি করে থাকে। মসজিদের বাইরে সব সময়ই নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়। সরকারিভাবে মসজিদে ইমাম নিয়োগ দেয়া হয় এবং ইমামদের প্রতি নজর রাখা হয়। উইঘুরদের সাহিত্য-সংস্কৃতিসহ যেকোনো ধরনের প্রকাশনা সরকারি সেন্সর ছাড়া আলোর মুখ দেখতে পারে না। কারো ব্যাপারে সামান্যতম সন্দেহ হলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জিংজিয়াংকে উইঘুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বলা হলেও বাস্তবে স্বায়ত্তশাসনের কোনো চিহ্নই এখানে নেই। পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামি আন্দোলন নামে জিংজিয়াংয়ের উইঘুরদের একটি সংগঠনকে চীন সরকার সন্ত্রাসী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করে নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি চীন সরকার এই সংগঠনটিকে আলকায়েদার সাথে যুক্ত থাকার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাতেও এটির নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। চীনের গৃহযুদ্ধের সময় স্বল্প সময়ের জন্য জিংজিয়াংকে স্বাধীন-পূর্ব তুর্কিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছিল উইঘুররা। এরপরই চীনা বাহিনী এসে এই প্রদেশটিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ধীরে ধীরে সেই নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর ও ভয়াবহ হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উইঘুর যুবকরা সম্প্রতি উরুমচিতে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, চীন সরকার তাদের ইতিহাস ও কাশগড় নগরীর প্রাচীন ভবনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের ধর্ম, সংস্কৃতি, পরিচিতি ও স্বার্থের প্রতি সরকারের ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ নেই। উইঘুর শিশুরা স্কুলে তাদের নিজস্ব ভাষা ও ধর্ম শিক্ষা করতে পারে না। স্কুলে কেবল চীনা ভাষাতেই শিক্ষা দেয়া হয়। হানরা আমাদের আবর্জনার মতো গণ্য করে। সরকার উইঘুরদের প্রান্তিক অবস্থায় ঠেলে দেয়ার জন্য বিগত বছরগুলোতে উরুমচিসহ জিংজিয়াংয়ের অন্যান্য স্থানে লাখ লাখ হানকে এনে বসতি গড়ে দিয়েছে। রাজধানী উরুমচির প্রায় ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৭৫ শতাংশের বেশি হচ্ছে হান। এটি এখন হানদের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
জিংজিয়াংয়ে চীন সরকারের অনুসৃত কঠোর নীতির কারণে খুব সামান্যসংখ্যক উইঘুর মুসলমানই হজে যাওয়ার সুযোগ পান। রমজান মাসে উইঘুর সরকারি কর্মচারীরা রোজা রাখতে পারেন না কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার কারণে। জুমার নামাজের খুৎবায় কী কথা বলা হবে সেটাও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগেই ইমামকে বলে দেন। উইঘুরদের প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত কাশগড় নগরীর অনেক মসজিদ ও ভবন ভেঙে ফেলে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর অনেক এলাকার মুসলমানদের উচ্ছেদ করে কাশগড় থেকে শত মাইল দূরে নির্মিত আবাসিক কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের কোনো অনুমতি নেয়া কিংবা জিজ্ঞাসা করারও প্রয়োজন মনে করেনি সরকার।
উইঘুর মেয়েদের বিয়ে-সমস্যা
জিংজিয়াং প্রদেশে সরকারের তথাকথিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের অনেকটাই বাধ্যতামূলকভাবে উপকূলীয় প্রদেশগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাজধানী উরুমচিসহ প্রদেশের অনেক এলাকার উইঘুরদের অভিযোগ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবিবাহিত উইঘুর মেয়েদের নাম তালিকাভুক্ত করে তাদের দূরবর্তী প্রদেশের কারখানায় পাঠাতে অনেক সময় বাধ্য করে থাকে। কোনো অভিভাবক এতে রাজি না হলে তাকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়। এ ধরনের জরিমানার পরিমাণ হয়ে থাকে ওই পরিবারের প্রায় ছয় মাসের আয়ের সমান। ফলে জরিমানা দেয়ার ভয়ে উইঘুর অভিভাবকরা তাদের অবিবাহিত মেয়েদের চাকরির জন্য শত শত মাইল দূরের কারখানায় পাঠাতে বাধ্য হন। পরে এসব মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায় না।
জিংজিয়াং প্রদেশে সরকারের তথাকথিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ-তরুণীদের অনেকটাই বাধ্যতামূলকভাবে উপকূলীয় প্রদেশগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাজধানী উরুমচিসহ প্রদেশের অনেক এলাকার উইঘুরদের অভিযোগ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবিবাহিত উইঘুর মেয়েদের নাম তালিকাভুক্ত করে তাদের দূরবর্তী প্রদেশের কারখানায় পাঠাতে অনেক সময় বাধ্য করে থাকে। কোনো অভিভাবক এতে রাজি না হলে তাকে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়। এ ধরনের জরিমানার পরিমাণ হয়ে থাকে ওই পরিবারের প্রায় ছয় মাসের আয়ের সমান। ফলে জরিমানা দেয়ার ভয়ে উইঘুর অভিভাবকরা তাদের অবিবাহিত মেয়েদের চাকরির জন্য শত শত মাইল দূরের কারখানায় পাঠাতে বাধ্য হন। পরে এসব মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায় না।
তাহির নামে ২৫ বছরের এক উইঘুর যুবক বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছে। কিন্তু হান
জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দূরবর্তী কোনো প্রদেশে চাকরি করে আসা কোনো উইঘুর মেয়েকে
বিয়ে করতে তাহির রাজি নয়। তার বক্তব্য হচ্ছে এ ধরনের কোনো মেয়েকে আমি কখনোই
বিয়ে করব না। কারণ তাদের কুমারিত্ব বা সতীত্ব নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসার
সম্ভাবনা খুবই কম। ওই সব কারখানার হান কর্মচারী ও কর্মকর্তারা উইঘুর
মেয়েদের সবসময়ই অশ্লীল কথাবার্তা বলে এবং গালিগালাজ করে থাকে। এ ছাড়া
শ্লীলতাহানির ভয় তো আছেই। এসব দূরে গিয়ে চাকরি করে আসা উইঘুর মেয়েদের বিয়ে
নিয়ে একটি সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে চীন সরকার। অনেক উইঘুর বিশ্লেষক ও
গবেষকের মতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই উইঘুর সমাজে এ রকম একটি সমস্যা তৈরি
করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন